বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারণে সরকার সবাইকে ঘরে লক ডাউন থাকতে বলেছে। কারো সাথে কাউকে মিশতে বারণ করা হয়েছে। আমরা বড়রাই এই অবস্থায় ঘরে বসে খুব বাজে সময় কাটাচ্ছি আর ছোট বাচ্চাদের কথা তো বাদ ই দিলাম। ওদের কে বুঝিয়ে ঘরে রাখাটা বেশ মুশকিলের কাজ। আর ঘরে ও সারাদিন দুষ্টুমি ও হৈ হুল্লা করতেই থাকে।
এমতাবস্থায় বাচ্চাকে ঘরে শান্ত ভাবে ধরে রাখার জন্য আমি আপনাদের কিছু টেকনিক শিখিয়ে দিব যা আমি নিজে ও চেষ্টা করেছি এবং সফল হয়েছি। আশা করছি আমার পদ্ধতি গুলো আপনাদেরও ভালো লাগবে।
ঘরের কাজে সাহায্য করা

ঘরের কাজে অথবা একে অপরকে সাহায্য করার যে মানসিকতা তা কিন্তু এই সময়টাতে আপনি চাইলেই আপনার বাচ্চাকে শেখাতে পারেন। ঘরের টুকিটাকি কাজ, ঘর গোছানো, ময়লা সঠিক স্থানে ফেলা, নিজের কাপড় গুলো গুছিয়ে রাখা, নিজের খেলনা গুলো নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা এগুলো করার কথা সুন্দর করে বলে দিতে পারেন। চাইলে সারাদিনের কাজের একটা লিস্ট করে দিতে পারেন।

তারপর ওদের দেখিয়ে দিবেন, উৎসাহ দিবেন, ওরা কাজটা করলে বাহবা দিতে ভুলবেন না। তাহলে দেখবেন কত উৎসাহ সহ কারে ওরা কাজটা করবে সেই সাথে ওরা নিজেদেরকে পরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মনে করবে।
রান্না শেখানো

আপনি চাইলে আপনার বাচ্চাকে টুকিটাকি রান্নার কাজে ব্যস্ত রাখতে পারেন। রুটি তৈরি করে দেয়া, আঁটাতে লবণ দেয়া, শাক বাছতে দেয়া, নুডলস রান্না, শরবত বানানো, এগুলো শেখাতে পারেন। সেই সাথে কোনটিতে কি পরিমাণে উপাদান লাগবে তাও শিখিয়ে নিতে পারেন। এতে করে আপনার বাচ্চা সৃজনশীল হওয়ার পাশাপাশি ঘরে থাকতেও উৎসাহ পাবে। আপনি চাইলে ওদের কে খাবার পরিবেশন করতে বলতে পারেন এই কাজটা ও ওদের মধ্যে মূল্যবোধের সৃষ্টি করবে।
কারুশিল্প

আপনার বাচ্চাকে বিভিন্ন ধরনের কারুকাজ শেখাতে পারেন। আপনি ওদের কে সাথে নিয়ে বিভিন্ন জিনিস যেমন- কাগজ, সুতা, রঙ, দিয়ে সুন্দর সুন্দর জিনিস বানাতে পারেন। যেমন- কাগজ দিয়ে নৌকা, ফুল, সুই সুতা দিয়ে রুমালে ফুল করা, সুতার বল, বিভিন্ন ধরনের গিফট কার্ড, আরো অনেক কিছু বানানো শেখাতে পারেন। আপনি ইউটিউভ থেকে ভালো ভালো টিউটোরিয়াল ফলো করতে পারেন এজন্য। বাচ্চাদের রঙ, পেন্সিল দিয়ে বিভিন্ন জিনিস আঁকতে দিতে পারেন। এভাবে আপনার বাচ্চা অনেকটা সময় ব্যস্ত থাকবে সেই সাথে অনেক কিছু শিখতে ও পারবে।
বাগান করা

আপনি যদি চান তাহলে বারান্দায় ফুলের গাছ লাগাতে পারেন। আর আপনার বাচ্চাকেও শেখাতে পারেন কীভাবে গাছের যত্ন নিতে হয়। গাছে পানি দেয়া, গাছ লাগানো, গাছের সঠিক যত্ন নেওয়া, গাছ কীভাবে বড় হয় কত দিন পর বীজ থেকে চারা গজায় তা সব আপনার বাচ্চাকে পর্যবেক্ষণ করে লিখে রাখতে বলতে পারেন। এভাবে আপনার বাচ্চা ঘরে ব্যস্ত থাকবে।
নতুন নতুন জিনিস জানা
এই সময় বাচ্চাদের নতুন নতুন জিনিস শেখানোর সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। কারণ এখন বাড়ীর সবাই মোটামুটি ফ্রি সময় কাটাচ্ছে। আপনি চাইলে বাচ্চাদের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ধারণা দিতে পারেন। বাচ্চাদের সাথে বিভিন্ন শিক্ষামূলক বিষয় নিয়ে সবাই মিলে আলোচনা করতে পারেন। এভাবে বাচ্চারা নতুন নতুন জিনিস সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবে। ওদের হাতে বিভিন্ন গল্পের বই তুলে দিতে পারেন। বই পড়লেও জ্ঞান বাড়বে।
গান শেখা

এই সময়ে বাচ্চাদের সাথে নিয়ে আপনি গান অনুশীলন করতে বসে যান। নিয়ম করে গান করুন। বাদ্যযন্ত্র থাকলে ভালো আর না থাকলে যে কোন জিনিস যেমন- প্লেট, চামচ, কলশী, টেবিল ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। একটু বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ইউটিউভ বা অনলাইন হেল্প নিতে পারেন। অনলাইনে আজকাল এমন অনেক ক্লাশ আছে যেখানে রেগুলার বেসিস অনুশীলন করার ব্যবস্থা আছে। এভাবে আপনি ও আপনার বাচ্চা অনেকটা সময় কাছাকাছি থাকার সুযোগ ও পাবেন আর সেই সাথে আপনার বাচ্চা ও ঘরে থাকতে আনন্দ পাবে।
জ্ঞান মূলক খেলা

বাসায় বাচ্চাদের নিয়ে আপনি কিছু খেলা খেলতে পারেন। এতে করে বাচ্চার জ্ঞান বাড়বে সেই সাথে সে আনন্দ ও পাবে। এমন খেলা খেলবেন যাতে বাচ্চা নতুন কিছু খেলার ছলে শিখতে পারে যেমন- লুকোচুরি, বিভিন্ন ফুল, পাখি, দেশ, ফলের নাম বলতে বা লিখতে বলা, অক্ষর দিয়ে শব্দ বানানো, কোন বিষয়ে গল্প লেখা, মুখে গল্প বলা, কোন জিনিসের আকার আকৃতি সম্পর্কে বলা, বিভিন্ন ভাষা শেখা, ইত্যাদি। এভাবে জ্ঞান মূলক খেলাচ্ছলে আপনার বাচ্চাকে অনেক কিছু শেখাতে পারবেন সেই সাথে আপনার বাচ্চা ঘরে সুন্দর সময় কাটাবে।
লেখা শেখানো

লেখাটা একটা আর্ট বা দক্ষতা যা অনুশীলন না করলে হয় না। সঠিক ভাবে যে কোন বিষয় নিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে লেখার জন্য অবশ্যই এ সময়টা আপনি কাজে লাগাতে পারেন। আপনার বাচ্চাকে যে কোন একটা টপিক দিয়ে লিখতে বলেন। দেখেন সে কতটুকু লিখতে পারে আর যদি না পারে আপনি বুঝিয়ে দিন। আর যদি বাচ্চা ছোট হয় তবে তাকে অক্ষর লিখতে শেখান। এতে করে বাচ্চাদের মধ্যে লেখার প্রতি একটা আগ্রহ বাড়ে। চেষ্টা করবেন টপিকটা যেন একটু মজার হয় যাতে করে আপনার বাচ্চা আগ্রহ সহকারে লেখে।
সায়েন্স এক্সপেরিমেন্ট

সায়েন্স এক্সপেরিমেন্ট বলতে আমরা বুঝি অনেক দ্রব্যের মিশ্রণ, অনেক সময় এ মিশ্রণ সঠিক না হলে বিস্ফোরণ হতে পারে। কিন্তু আসলে বিস্ফোরণ ছাড়া ও এ এক্সপেরিমেন্ট করা যায়। বাচ্চাদের জন্য অবশ্যই সহজ আর ক্ষতি হবে না এমন কিছু বাছাই করতে হবে আর তা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে করা যায় যেমন- কোন রঙের সাথে কোন রঙ মেশালে কি রঙ হবে তা করতে বলতে পারেন, কাগজ , কাঠি আর গাম দিয়ে বিভিন্ন শেপে জিনিস বানাতে বলতে পারেন, এছাড়া ও নেট থেকে অনেক সহজ সহজ এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে তা বাচ্চাদের করতে বলতে পারেন। যদি তারা না পারে তাহলে দেখিয়ে দিন। এভাবে বাচ্চারা নতুন কিছু খেলার ছলে শিখতে পারে।
এভাবে আপনি যদি আপনার বাচ্চাকে সৃজনশীল কাজের দ্বারা ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করেন তাহলে বাচ্চা ঘরে থাকার পাশাপাশি অনেক কিছু শিখতেও পারবে। তাই আপনি চেষ্টা করুন আর ধৈর্য সহকারে বাচ্চা কে সময় দিন।
আপনাদের মতামত অথবা কোন প্রশ্ন থাকলে তা অবশ্যই কমেন্ট বক্সে লিখতে ভুলবেন না।