করোনা ভাইরাস কী? এর লক্ষণ, সনাক্তকরণ পদ্ধতি, চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নেই।
করোনা ভাইরাস বর্তমানে একটি আতঙ্কের নাম। এই নাম টি বর্তমানে শোনেনি এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে অনেকের মৃত্যুও ঘটেছে। আর এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যাও কম নয়।
উৎপত্তিঃ
মূলত চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকেই এর আবির্ভাব ঘটেছে। চীনেই বেশির ভাগ মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত। এর প্রভাবে চীনে মৃতের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই পর্যন্ত প্রায় ৪৯০ জনের মত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজারের বেশী। এছাড়াও ফিলিপাইনে ১ জন ও হংকংয়ে ১ জনের মৃত্যুর সংবাদ জানা গেছে। আরো জানা গেছে তারা উভয়েই চীনের উহান থেকে ফেরত এসেছিল।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত দেশঃ
চীন থেকেই এই ভাইরাসের আগমন। চীন ছাড়াও থাইল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, স্পেন, যুক্তরাজ্য, হংকং, ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়শিয়া, ফিলিপাইন সহ ২০ টি দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। চীন থেকে বাংলাদেশে ফেরত আসা ৩১৪ জনকেও পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে তারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত কিনা।
করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সকলকে সতর্ক হতে বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) জরুরি স্বাস্থ্য সেবা কর্মসূচি।
করোনা ভাইরাস কী? এর লক্ষণ, প্রতিকার, চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নেই।
করোনা ভাইরাসঃ
মূলত এটি এমন একটি ভাইরাস যা কোন পশু পাখির মধ্যে থেকে মানুষের দেহে প্রবেশ করে। অনেক প্রজাতির করোনা ভাইরাসের মধ্যে মাত্র ৭ টি প্রজাতি মানুষের দেহে প্রবেশ করার ক্ষমতা রাখে। সার্স ভাইরাসটি ও এক প্রকারের করোনা ভাইরাস যা পাখির শরীর থেকে মানুষের দেহে প্রবেশ করেছিল যার নাম ছিল বার্ড ফ্লু। আরো একটি ভাইরাস ছিল মার্স যা উট থেকে ছড়িয়েছিল।
করোনা ভাইরাস সম্ভবত বাদুড় বা গন্ধগোকুল থেকে ছড়িয়েছে মানুষের দেহে। সাধারণত হাঁচি, কাশি ও জ্বরের মাধ্যমে এটি প্রকাশ পায়।
করোনা ভাইরাসের লক্ষণঃ
যেকোন রোগের পূর্ব লক্ষণ ই হলো জ্বর, হাঁচি, কাশি করোনা ভাইরাস ও এর ব্যতিক্রম নয়। নিম্নে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ গুলো দেওয়া হলো,
১. সর্দি হওয়া।
২. প্রচুর কাশি হওয়া।
৩. গলা ব্যাথা।
৪. মাথা ব্যাথা।
৫. জ্বর।
৬. অবসাদ ভাব।
৭. হাঁচি।
৮. শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
৯. নিউমোনিয়া।
এই ভাইরাস টি শরীরে ঢুকলে এর লক্ষণ দেখা দিতে ৫ দিন সময় লাগে। এর প্রথম লক্ষণ হলো অনেক জ্বর। তারপর শুকনো কাশি এবং ১ সপ্তাহের মধ্যেই শ্বাসকষ্ট।
তা ছাড়াও অন্যান্য লক্ষণ ও থাকতে পারে।
করোনা ভাইরাস নির্ণয় পদ্ধতিঃ
করোনা ভাইরাস হয়েছে কিনা তা জানার জন্য অবশ্যই হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু পরীক্ষা বা টেস্ট করাতে হবে।
যেমন,
★ মলিকিউলার টেস্টঃ এর মাধ্যমে ভাইরাসগুলো কতটা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে সংক্রমণের ফলে তা নির্ণয় করা হয়।
★ সরোলজি টেস্টঃ এর মাধ্যমে এই ভাইরাসের উপর নজরদারি করা হয়। এবং পূর্ববর্তী ভাইরাস সংক্রমণের এন্টিবডি সনাক্ত করে, যা মানুষের ভাইরাসের ধরণ সনাক্ত করে।
চিকিৎসাঃ
করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা ব্যবস্থা কিছুটা বের করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে কিছু ঔষধের মাধ্যমে এর চিকিৎসা সম্ভব। তবে অতিরিক্ত আকার ধারণ করলে এর চিকিৎসা একটু কঠিন।
করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন এখনো আবিষ্কার হয়নি তবে এর গবেষণা চলছে। খুব তাড়াতাড়ি এর ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়ে যাবে আশা করছি।
প্রতিরোধ ব্যবস্থাঃ
আমরা যদি একটু পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকি তাহলে এই ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব। নিচে কিছু প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা তুলে ধরা হলো,
১. হাঁচি বা কাশি দিলে অবশ্যই মুখ ঢেকে নিবেন। এজন্য রোমাল বা টিস্যু ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
২. হাঁচি বা কাশির পর মুখ হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন।
৩. লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তার দেখান ও তার পরামর্শ অনুযায়ী ঔষুধ সেবন করুন।
৪. কাঁচা ডিম, কাঁচা মাংস খাবেন না। ভালো করে সিদ্ধ করে খাবেন।
৫. যদি মনে করেন আপনি সংক্রমিত তাহলে কারো সাথে ঘনিষ্ঠতা করবেন না।
৬. নিজেকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
৭. ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।
৮. সিগারেটের ধোঁয়া বা কোন ধোঁয়াটে জায়গা থেকে দূরে থাকুন।
৯. ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকুন।
১০. হাত সাবান দিয়ে ধুবেন সবসময়।
১১. হাত দিয়ে নাক, মুখ ধরবেন না।
১২. বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করুন।
পরিশেষে,
যেকোন রোগের সৃষ্টিই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন না থাকার কারনে হয়ে থাকে। করোনা ভাইরাস ও তেমন ই একটি রোগ। সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন। আর রোগ হলে অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
আসুন আমরা ভয় না পেয়ে সবসময় সচেতন থাকার চেষ্টা করি এবং অন্যকেও সচেতন করি। একটু সচেতনতা আমাদের জীবনকে করে তুলতে পারে অনেক সুন্দর।
।।সুস্থ রাখুন নিজেকে সবসময়।।