ফর্সা ত্বক কে না চায়। প্রতিটি মেয়েই স্বপ্ন দেখে উজ্জ্বল, ফর্সা ত্বকের। এজন্য অনেকেই কেমিক্যাল যুক্ত বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহার করে যা অনেক সময় ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়। প্রাকৃতিক ভাবে কিছু টেকনিক ব্যবহার করে আপনার ত্বক কোন ক্ষতি ছাড়াই হতে পারে ফর্সা।
কীভাবে?
আসুন জেনে নেই এরকম কিছু প্রাকৃতিক উপাদানের নাম যা ব্যবহার করলে আপনার ত্বক খুব সুন্দর, মসৃণ আর ফর্সা হয়ে ওঠবে। আর আপনি আপনার স্বপ্নের মত ত্বক পেয়ে হয়ে যাবেন আরো প্রাণবন্ত।
ফর্সা ত্বকের জন্য কার্যকর কিছু ঘরোয়া উপাদান
১. লেবুর রসঃ
ভিটামিন-সি এর অন্যতম প্রধান উৎস হলো লেবু। লেবুর রস ত্বকের দাগ, ছোপ দূর করে দেয় সেই সাথে রোদে পোড়া দাগ ও হালকা করে। লেবু ত্বকের শুষ্কতা কাটিয়ে ত্বককে করে তোলে আরো প্রাণবন্ত।

ব্যবহারের নিয়মঃ
একটা লেবু নিয়ে তার রস ভালো করে বের করে নিন। তারপর তুলোর সাহায্যে লেবুর রস মুখে, গলায় ও ঘাড়ে লাগিয়ে নিন। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ভালো ভাবে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
সপ্তাহে ২ দিন লেবুর রস ব্যবহার করতে পারবেন।
২. দইঃ
ফর্সা হওয়ার জন্য দই এর কোন বিকল্প নেই। দই এ থাকা বিভিন্ন উপাদান ত্বকের লোমকূপের ভিতরে থাকা ময়লা বের করে ত্বককে পরিস্কার করে। নিয়মিত দই ব্যবহারের ফলে ত্বক হয় ফর্সা, লাবণ্যময়।

ব্যবহারের নিয়মঃ
প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় দই রাখতে পারেন। তাছাড়া ২ চামচ দইয়ের সাথে ১ চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে মুখে ও গলায় লাগাতে পারেন। চাইলে শুধু দই ও লাগাতে পারেন। ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
সপ্তাহে প্রতিদিনই এই প্যাকটি ব্যবহার করা যাবে।
৩. হলুদঃ
ফর্সা ত্বকের জন্য হলুদ আদিকাল থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। হলুদ ব্যবহারে ত্বক ভিতর থেকে ফর্সা হয়ে ওঠবে। হলুদের মধ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন উপাদান ত্বক কে খুব দ্রুত উজ্জ্বল করে তোলে সেই সাথে ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ কমিয়ে টান টান করে তোলে।

ব্যবহারের নিয়মঃ
১ চা চামচ হলুদের গুড়া বা কাঁচা হলুদ বাটা, মধু, দই একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন। তারপর মিশ্রণ টি পুরো মুখে, গলায় লাগিয়ে নিন। শুকানোর আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর হালকা কুসুম গরম পানিতে মুখ টা ভালো করে ধুয়ে নিবেন। সপ্তাহে ১ বার এই মিশ্রণ টি ব্যবহার করতে পারবেন।
১ চামচ হলুদের গুড়া বা বাটা হলুদের সাথে ২ চামচ লেবুর রস নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। তারপর পুরো মুখে লাগান। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এই মিশ্রণ টি সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করতে পারবেন।
৪. পেঁপেঃ
ফর্সা ত্বকের জন্য পেঁপে একটি কার্যকরি উপাদান। পেঁপের মধ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ থাকায় ত্বক সুন্দর হয়। পেঁপে ত্বকের ভেতর কোলাজেনের মাত্রা বৃদ্ধি করে ফলে ত্বক ভেতর থেকে উজ্জ্বল হয়।

ব্যবহারের নিয়মঃ
পাঁকা পেঁপে নিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। তারপর কয়েক ফোটা লেবুর রস দিয়ে ভালো করে মিশেয়ে নিন। ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এই প্যাকটি সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করা যাবে।
৫. আলুঃ
আলুতে আছে পটাসিয়াম, ক্লোরাইড, সালফার যা ত্বকের জন্য ভালো। আলু ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং ত্বকের রিংকেল কমাতে সাহায্য করে। সেই সাথে ত্বকের কালো দাগ যেমন, ব্রণের দাগ, রোদে পোড়া দাগ, চোখের নীচের কালো দাগ দূর করতে সহায়তা করে।

ব্যবহারের নিয়মঃ
২ টেবিল চামচ আলুর রস করে একটা বাটিতে নিন। এতে কয়েক ফোটা লেবুর রস দিয়ে দিন। ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার মুখে,গলায়, ঘাড়ে লাগান ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং ধুয়ে ফেলুন।
সপ্তাহে ২ বার এই মিশ্রণ টি লাগাতে পারবেন।
৬. অ্যালোভেরাঃ
অ্যালোভেরা জেল এমন একটি উপাদান যার গুনাগুন বলে শেষ করা যাবে না। অ্যালোভেরা ত্বক ফর্সা করার জন্য অত্যন্ত কার্যকর একটি উপাদান। অ্যালোভেরা জেলে বিদ্যমান ভিটামিন ও খনিজ ত্বককে ভিতর থেকে উজ্জ্বল করে। এছাড়া ত্বকে টান টাম ভাব ও আনে। তাছাড়া ত্বকের দাগ, মেসতা দাগ ও দূর করতে সাহায্য করে।

ব্যবহারের নিয়মঃ
১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেলের সাথে ১ টেবিল চামচ লাল চিনি ভালো করে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। এবার মুখে, গলায় লাগান এবং ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন।
সপ্তাহে ২ বার এই মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারবেন।
৭. টমেটোঃ
টমেটো ত্বকের মধ্যে মৃত কোষ গুলোকে পরিস্কার করে এবং এর মধ্যে থাকা উপাদান গুলো ত্বকের দাগ, ছোপ দূর করে ত্বককে ভিতর থেকে উজ্জ্বল করে। এছাড়া রোদে পোড়া দাগ দূর করতেও টমোটোর কোন জুড়ি নেই।

ব্যবহারের নিয়মঃ
১ টা টমেটো ভালো করে ধুয়ে ব্লেন্ড করে নিন তারপর এতে কয়েক ফোটা লেবুর রস দিয়ে দিন। ভালো করে মিশিয়ে নিন এবং মুখে, গলায়, ঘাড়ে লাগান। ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
সপ্তাহে প্রতিদিন গোসলের আগে এই মিশ্রণ টি লাগাতে পারেন
৮. দুধঃ
দুধ ত্বক ফর্সা করার একটি সহজ উপায়। দুধের পুষ্টি গুণ জানেনা এমন লোক খুব কম ই পাওয়া যাবে। দুধ ভিতর থেকে ত্বককে হালকা করে ত্বকের মধ্যে একটা আলাদা উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে দেয়। প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ খেলে ত্বক ও চুল ভিতর থেকে পুষ্টি পায়।

ব্যবহারের নিয়মঃ
১ চামচ দুধের সাথে ১ চামচ মধু মিশিয়ে মুখে, গলায় লাগান। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। দুধের সর ও ব্যবহার করতে পারবেন দুধের পরিবর্তে।
প্যাকটি চাইলে প্রতিদিনই ব্যবহার করতে পারবেন।
৯. গোলাপ জলঃ
গোলাপ জল ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। বিশেষ করে সংবেদনশীল ত্বকের জন্য এটা খুবই উপকারী। দৈনিক গোলাপ জলের ব্যবহার ত্বককে লাবণ্যময়ী করে তোলে।

ব্যবহারের নিয়মঃ
পরিমাণমতো গোলাপ জল নিয়ে নিন। তুলোর সাহায্যে পুরো মুখে লাগান। প্রতিদিন গোসলের আগে এবং বাইরে থেকে এসে গোলাপ জল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন।
দিনে ২ বার গোলাপ জল ত্বকে ব্যবহার করতে পারবেন।
১০. শশাঃ
শশার মধ্যে প্রচুর পরিমানে এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে। যার কারনে শশা ত্বকের ভিতর থেকে ক্লিন করে ত্বকের নির্জীবতা দূর করে ফলে ত্বক হয়ে উঠে উজ্জ্বল ও লাবন্যময়। এছাড়াও শশার রস ক্লান্তি ভাব দূর করে মুখে ফ্রেশ ভাব আনে।

ব্যবহারের নিয়মঃ
২ টেবিল চামচ শশার রসের সাথে ১ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে মুখে ও গলায় লাগাবেন। ১৫-২০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। এক্ষেত্রে কোন সাবান ব্যবহার করবেন না।
সপ্তাহে প্রতিদিনই এটা ব্যবহার করতে পারবেন।
পরিশেষে,
ফর্সা, উজ্জ্বল ত্বক সবাই চায়। তাই একটু যদি ত্বকের কেয়ার প্রাকৃতিক ভাবে নেয়া যায় তবে ত্বকের কোন প্রকারের ক্ষতি ছাড়াই ত্বককে করে তোলা যায় আকর্ষণীয় ও প্রাণবন্ত। আর হ্যাঁ কোন কিছুই স্থায়ী হয় না তাই প্রতিদিন নিয়ম করে ত্বকের চর্চা অবশ্যই নিতে হবে।
ভালো থাকুক আপনার ত্বক, আর ভালো থাকুন আপনি।।