চুল হলো মানুষের সৌন্দর্যের অন্যতম উৎস। আর সেই চুল যদি হয় মসৃণ আর প্রানবন্ত তাহলে তো সৌন্দর্য আরো ফুটে উঠবে। স্বাস্থ্যবান চুল সবাই চায় সেই সাথে চুলটা হবে অনেক মসৃণ আর মোলায়েম। চুল হতে হবে মসৃণ, ঝলমলে তা লম্বা হোক আর খাটো, ঘন হোক আর পাতলা। মসৃণ চুল সবারই স্বপ্ন। মনে মনে সবাই চায়- “ইশ,, আমার চুলটা যদি সফট, সিল্কি আর মসৃণ হতো!”
চুল কোমল ও মসৃণ করার পদ্ধতিঃ
সাধারণত ২ টা পদ্ধতিতে চুলকে কোমল ও মসৃণ করে তোলা যায়। পদ্ধতি গুলো হলো,
- ন্যাচারাল পদ্ধতি
- কেমিক্যাল পদ্ধতি
এই ২ টা পদ্ধতিতে চুলকে নরম, কোমল, মসৃণ করা যায়।
ন্যাচারাল পদ্ধতিতে চুলকে মসৃণ, ঝলমলে আর সিল্কি করার জন্য কিছু প্রাকৃতিক উপাদান আর কিছু বুদ্ধি কাজে লাগাতে হয়। এক্ষেত্রে কাজ কিছুটা ধীর গতিতে হয় আর এটা দীর্ঘস্থায়ী হয় না কিন্তু এ পদ্ধতিতে চুলের কোন ক্ষতি ও হয় না।
আর কেমিক্যাল পদ্ধতিতে চুলকে মসৃণ ও সিল্ক করানোর জন্য বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় না এবং এ পদ্ধতিতে চুলকে ৪-৮ মাসের মত মসৃণ করে রাখা যায়। কিন্তু সঠিক ভাবে যত্ন না করলে এর প্রভাব খারাপ হতে পারে।
নিচে আমি ন্যাচারাল বা ঘরোয়া পদ্ধতিতে কীভাবে চুলকে মসৃণ, ঝলমলে, সিল্কি করা যায় সে সম্পর্কে একটু একটু আলোচনা করলাম। আশা করি সবাই উপকৃত হবেন।
১. হট ওয়েল ম্যাসাজঃ
হট ওয়েল ম্যাসাজ মানে চুলকে গরম তেলের মাধ্যমে মালিশ করানোকে বুঝায়। এর ফলে চুল নরম, কোমল হয় এবং মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। যেকোন ধরনের তেল যেমন, নারিকেল তেল, ওলিভ ওয়েল, বাদামের তেল গরম করে মালিশ করলেই এর ফলাফল খুব ভালো হবে। নিয়ম করে চুলে হট ওয়েল ম্যাসাজ করলে চুল অনেক সুন্দর, প্রাণবন্ত, ঝলমলে আর মসৃণ হয়ে যায়।

ব্যবহারের নিয়মঃ
চুলের সাইজ অনুযায়ী ৩-৪ চামচ তেল একটি বাটিতে নিবেন। তারপর তেল টা কে গরম করে নিবেন। তারপর দুই হাতের তালুতে নিয়ে মাথার ত্বকে আর চুলে ভালো করে তেল টা ম্যাসাজ করতে হবে। তারপর একটা তোয়ালে একটু ভাব দিয়ে গরম করে পুরো মাথাতে পেচিয়ে রাখবেন। এভাবে ৩০-৪০ মিনিট রেখে দিবেন। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে চুলটা ধুয়ে নিবেন। এভাবে সপ্তাহে ২ বার করলেই ভালো ফল পাওয়া যাবে।
২. চুল আঁচড়ানোঃ
সঠিক নিয়মে চুল আঁচড়ালে চুল অনেকটাই মসৃণ ও প্রানবন্ত হয়ে ওঠে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই চুলটা আঁচড়ে নিবেন কারণ সারারাত ঘুমানোর কারনে চুলে জট হয়ে যায়। কখনোই ভেজা চুল আঁচড়াবেন না। তবে গোসল করতে যাওয়ার আগে চুল কে আঁচড়ে জট মুক্ত করে নিবেন। এতে করে পানি মাথার ত্বক পর্যন্ত পৌছে যাবে। ওছাড়াও চুল আচঁড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট সময় বেছে নিবেন।
চুল আঁচড়ানোর নিয়মঃ
অবশ্যই মোটা দাঁত যুক্ত চিরুনি বাছাই করবেন। তারপর দৈনিক চুল আঁচড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্বাচন করবেন। যেমন, সকালে ঘুম থেকে উঠার পর, দুপুরে গোছলে যাওয়ার আগে। রাতে শোবার আগে। মোটকথা চুলকে সবসময় জট মুক্ত রাখার চেষ্টা করবেন।
৩. ডিম ও দইয়ের প্যাকঃ
ডিম ও দই এর প্রোটিন চুলের জন্য অনেক উপকারী। এর মাধ্যমে আপনার চুল গোড়া থেকে প্রোটিন পাবে আর চুল হয়ে উঠবে মসৃণ, আর ঝলমলে।

ব্যবহারের নিয়মঃ
২ টা ডিমের সাদা অংশ আর ২ টেবিল চামচ দই নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার মিশ্রণ টি ভালো করে গোড়া থেকে আপনার চুলে লাগান। ২০-৩০ মিনিট রেখে দিন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে শ্যাম্পু করে নিন। ব্যাস হয়ে গেল তারপর চুল শুকালে আঁচড়ে নিন দেখবেন চুল কতটা মসৃণ, ঝলমলে হয়ে গেছে।
৪. কলার প্যাকঃ
কলা চুলকে সিল্কি ও মসৃণ করার একটা কার্যকর উপাদান।

ব্যবহারের নিয়মঃ
কলা একটি, হাফ বাটি দই, আর মধু ২ চা চামচ নিয়ে নিন। এবার একটি বাটিতে কলার পেষ্ট ভালো করে তৈরি করে নিন। এবার একে একে মধু ও টক দই যোগ করুন ভালো করে মেশান। ব্যাস হয়ে গেল প্যাক তৈরি। এবার চুলে লাগিয়ে নিন আগা গোড়ায় ভালো করে। ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। শ্যাম্পু করে নিন। এই প্যাক লাগানোর ফলে চুলের পরিবর্তন আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
৫. দুধ ও মধুঃ
দুধ ও মধু চুলকে মসৃণ, ঝলমলে করে তোলে। দুধের প্রোটিন চুলে পুষ্টি আনে আর মধু চুলকে নরম আর মসৃণ করে।

ব্যবহারের নিয়মঃ
হাফ কাপ দুধ ও ২ টেবিল চামচ মধু নিন। ভালো করে মিশিয়ে একটা প্যাক তৈরি করুন। এবার চুলে ও মাথার ত্বকে ভালো করে লাগান। ২০-৩০ মিনিট রেখে দিন। তারপর ভালো করে ধুয়ে নিন। চাইলে শ্যাম্পু করে নিতে পারেন। সপ্তাহে ১ দিন এই প্যাক টি আপনি ব্যবহার করতে পারেন।
৬. অ্যালোভেরাঃ
অ্যালোভেরা চুলের ভিতর হাইড্রোজেনের বৃদ্ধি ঘটায়। অ্যালোভেরা চুলের বৃদ্ধির সাথে সাথে চুলকে নরম ও ঝলমলে করে।

ব্যবহারের নিয়মঃ
২ টেবিল চামচ নারিকেল তেল বা অলিভ ওয়েল গরম করে নিন এবার অ্যালোভেরা জেল নিয়ে নিন। একসাথে ভালো করে মেশান। চুলে লাগিয়ে নিন। ৪০ মিনিট রেখে ভালো করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন। ব্যাস হয়ে গেল।
৭. আপেল সিডার ভিনেগারঃ
আপেল সিডার ভিনেগার মাথার অতিরিক্ত তেল ও ময়লা দূর করে চুলকে মসৃণ ও ঝলমলে করে তোলে।

ব্যবহারের নিয়মঃ
২ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার ও এক কাপ পানি মিশিয়ে নিন ভালো করে। এবার আপনি শ্যাম্পু করে মাথা ধুয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণ দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। এরপর চুলে কোন পানি ব্যবহার করবেন না। চুল শুকালো পার্থক্য আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
৮.চায়ের লিকারঃ
চায়ের লিকার খাওয়ার সাথে সাথে চুলের জন্য ও উপকারী। চায়ের লিকার চুলকে ঝলমলে ও মসৃণ করে তোলে।

ব্যবহারের নিয়মঃ
একটা পরিস্কার পাত্রে দুই কাপ পানি নিয়ে নিন এবার চায়ের পাতা দিয়ে দিন। এবার চা ফুটতে দিন যতক্ষণ পর্যন্ত না দুইকাপ পানি এক কাপে পরিণত হয়। এবার শ্যাম্পু করা ভেজা চুলে এই মিশ্রণটি লাগান ভালো করে। ব্যাস হয়ে গেল।
৯. নারিকেল দুধ ও লেবুর রসঃ

নারিকেলের দুধের কারনে আপনার চুলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি পৌছাবে। আর লেবুর রস আপনার চুলকে সোজা ও ঝলমলে করে তুলবে।

ব্যবহারের নিয়মঃ
নারিকেল ভালো করে পিষে কাপর দিয়ে ছেকে দুধ তৈরি করে নিন। হাফ কাপ নারিকেলের দুধের সাথে ২ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এবার চুলে লাগান। ৩০-৪০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন চুল কতটা ঝলমলে ও মসৃণ হয়ে গেছে। সপ্তাহে একবার এই প্যাকটি লাগাতে পারেন।

উপরের পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করলে আপনার চুল অবশ্যই হবে মসৃণ, আকর্ষণীয়, ও প্রানবন্ত। তাহলে কেন অপেক্ষা করছেন? আপনিও আর দেরি না করে এক্ষুণি ঘরে বসে তৈরি করে ফেলুন এই প্যাকগুলো আর চুলকে করে ফেলুন ঝরঝরে, ঝলমলে ও প্রাণবন্ত।